অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়েছিল

অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়েছিল সেটি সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল এ আপনাদের কে বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হবে। জাতিগত ভাবে আমরা বাঙ্গালি জাতি। আমাদের ইতিহাস ওতপ্রোত ভাবে মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক

অপারেশন-সার্চলাইটের-নৃশংস-হত্যাকান্ডের-খবর-বিশ্বে-কিভাবে-ছড়িয়েছিল

একদিন আগের ঘটনা অপারেশন সার্চলাইট। এই অপারেশন এর নাম করন করা হয় খুজে খুজে হত্যা করার উদ্দেশ্য থেকে। এই অপারেশন টি ছিল বাঙ্গালির জীবনে এক কালো অধ্যায়। তবে মিডিয়া সহ অনেক মাধ্যমে এই খবর দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

সূচিপত্রঃ অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়েছিল

অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়েছিল

অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙ্গালীদের উপর এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় যার নাম হলো অপারেশন সার্চলাইট। এই রাতে বাঙালির জীবনে নেমে আসে রাতের ভেতরে অন্ধকার রাত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র এছাড়াও সাংবাদিক ও নানা রাজনৈতিকবীদ দের নির্মমভাবে, নির্বিচারে, নৃশংসভাবে হত্যা করে। জ্বালিয়ে দেয় সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয় লাইব্রেরী। এর পাশাপাশি চালায় গণহত্যা ও ধর্ষন। তৎকালীন সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার কর্তৃক,

এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এবং পাকিস্তান সরকার চেয়েছিল এই গণহত্যা বিশ্বের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে। অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কি ভাবে ছড়িয়েছিল এই বিষয়টি জানা অত্যন্ত জরুরী। হত্যাকাণ্ডে নৃশংসতা এতটাই বেশি ছিল যে সেটি কোনভাবেই দমিয়ে রাখা যায়নি। যদিও সাংবাদিক অর্থাৎ গণমাধ্যমের দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয় তবুও কখনো পর্যটকদের কখনো গোপনে থাকা সাংবাদিকদের আবার কখনো মিশনারিদের মাধ্যমে এই খবর পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  • সাংবাদিকদের গোপন রিপোর্টের মাধ্যমে।
  • রেডিও বার্তার সম্প্রচারের মাধ্যমে।
  • প্রত্যক্ষদর্শী দের মুখের বর্ণনায়।
  • প্রবাসী বাঙ্গালিদের মাধ্যমে।
  • মিশনারি সংস্থার চিঠির মাধ্যমে।
  • জাতিসংঘের প্রতিনিধির মাধ্যমে।
  • গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে।
  • রক্তাক্ত চিত্রের প্রদর্শনীর মাধ্যমে।

সাংবাদিকদের গোপন রিপোর্টের মাধ্যমে

তৎকালীন পাকিস্তানের সরকার এই অপারেশন টি পরিচালনা করার জন্য বিশ্বের অন্যান্য সাংবাদিক যারা পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থান করছিল তাদের দ্রুত দেশ ত্যাগের আদেশ দেন। এই দেশ ত্যাগের আদেশ দেওয়ার কারণ হলো যাতে শে মার্চ কালো রাতের সেই বীভৎসতা বহির্বিশ্ব জানতে না পারে। একে একে সকল সাংবাদিক দেশ ত্যাগ করলেও কিছু সাহসী সাংবাদিক সাহস দেখিয়ে পুরো পাকিস্তানের অবস্থান করেন তার মধ্যে একজন ছিলেন সায়মন ড্রিং। তিনি পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন এবং পুরো বিষয় প্রত্যক্ষ করেছিলেন।
তিনি সারারাত পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো বর্বর অভিযান সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন এবং খসড়া কিছু রিপোর্ট তৈরি করেন তার সাথে ছবি সংযুক্ত করেন। সুযোগ পেয়েই সেই রিপোর্টটি পশ্চিমা গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। সায়মন ড্রিং এর মত কিছু সাহসী সাংবাদিক ২৫ মার্চের ঘটনাগুলো বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেন। এভাবে অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর বহির বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এ সমস্ত সাংবাদিকগণ নিজের জীবনের পরোয়া না করে ন্যায় ও সত্যের পথে থেকে সাহসিকতার ভূমিকায় বাংলাদেশ সাহায্য করেছিলেন।

রেডিও বার্তার সম্প্রচারের মাধ্যমে

অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করার সময় অনেক সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী চেষ্টা করেছিলেন যাতে এই নৃশংসতার খবর সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে যায়। কিন্তু সে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীকে অস্ত্রহীন করে দেওয়া হয়। তখন একমাত্র উপায় ছিল রেডিও বার্তার মাধ্যমে সম্প্রচার করা এবং বিশ্ববাসীকে তা সম্পর্কে জানানো। রেডিও বার্তার মাধ্যমে সংবাদটি দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীরা রেডিও স্টেশন সমূহ দখল করে ফেলেছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল।

দখল করার পূর্বেই কিছু সাহসী সরকারী ও বেসরকারি কর্মচারী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রেডিও মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে থাকেন। ভারতের কিছু অঞ্চল এ অবস্থিত রেডিও স্টেশন হয়ে গেল স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের মাধ্যম। তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। এই বেতার কেন্দ্রে বিভিন্ন ভাষায় সেই দিনের নিশংসতার ঘটনা সম্প্রচার করা হয়। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষায় এই সম্প্রচার যখন করা হয় তখন পশ্চিমা বিশ্ব সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ এ সম্পর্কে অবহিত হয়। কাজেই রেডিও বার্তার সম্প্রচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রত্যক্ষদর্শী দের মুখের বর্ণনায়

পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো এই নির্মম ঘটনাটি যারা সেই সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের জীবনে দাগ কেটে যায়। কেননা তারা নিজের চোখে এই ঘটনাগুলো সরাসরি দেখেছিলেন। ভাগ্য ভালো ছিল সেজন্য তারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন এবং পরদিন তাদের দেখা ঘটনা সমূহ বর্ণনা করেন। কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারী, সাংবাদিক ও অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল সেগুলো তারা সরাসরি দেখেছিলেন। এছাড়াও দেখেছিলেন কিভাবে মানুষের বাড়িঘর পুড়ে দেওয়া হয়েছিল।

যখন এই কথাগুলো তারা প্রকাশ করে দেন তখন বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।এই খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে তখন মিশনারী সংস্থাসমূহ, ভারতীয় গণমাধ্যম সহ অন্যান্য নানা সংস্থা তাদের এই কথাগুলো পুরো বিশ্বে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন এবং তা দ্রুত বহির্বিশ্বের মানুষ জানতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানের সেই রাতে কি ঘটনা ঘটেছে বিস্তারিত বহির্বিশ্বের মানুষ জানার পর তাদের মনেও দাগ কেটে যায়। এই নৃশংসতা যেন বনের পশুদেরও হার মেনে দিয়েছল। প্রত্যক্ষদর্শীদের মৌখিক বর্ণনায় এটিই ফুটে উঠেছিল।

প্রবাসী বাঙ্গালিদের মাধ্যমে

অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়েছিল তা বর্ণনা করতে হলে প্রবাসী বাঙ্গালীদের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। সেই রাতে যখন এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড চলছিল তখন প্রবাসী বাঙালিগণ তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে খবর পাচ্ছিলেন এবং তাদের মনেও দাগ কেটে গিয়েছিল। প্রবাসী বাঙালিগণ বুঝে গিয়েছিলেন যদি আন্তর্জাতিক মহলে এই হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে জনমত গঠন করা হয় তাহলে হয়তো কিছু হলেও হতে পারে। তাই তারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন।
নিজের আত্মীয়দের কাছ থেকে পাওয়া খবরগুলো দ্রুত আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে দেন এবং বাঙ্গালীদের পক্ষে জনমত গঠন করেন। প্রবাসী বাঙালিগণ ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন। এই বিক্ষোভ মিছিল গুলো ঘটনা প্রকাশ এর মাধ্যম হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। অর্থাৎ এই বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমেই বহির্বিশ্ব জানতে পেরেছিল সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের কি ঘটনা ঘটছে। নিউইয়র্ক, কাতার, লন্ডন সহ আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের প্রবাসী গণ এই কাজে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন।

মিশনারি সংস্থার চিঠির মাধ্যমে

অপারেশন সার্চলাইট এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পাকিস্থানি বাহিনী ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এবং চেয়েছিল যে এই খবর যাতে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু তৎকালীন সময়ে মিশনারি সংস্থাগুলো সরাসরি সেই ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তারা দেখেছিলেন কিভাবে পাকিস্তানী বাহিনী বাঙ্গালীদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনা কমে মিশনারী সংস্থাগুলো অবস্থান করছিল তৎকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এবং তাদের সাথে ছিল বহির্বিশ্বের গণমাধ্যমের লোকজন এবং স্বেচ্ছাসেবী দল।
অপারেশন-সার্চলাইটের-নৃশংস-হত্যাকান্ডের-খবর-বিশ্বে-কিভাবে-ছড়িয়েছিল
তাদের দেখা ঘটনাগুলো তারা দ্রুত সেই সব গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন এবং বহিঃ বিশ্বকে এই সম্পর্কে জানান দেন। তারা গণমাধ্যমকে জানান তৎকালীন সময়ে সেই রাতে কি ঘটনা ঘটেছে এবং কতজনের মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখ ছিল গণহত্যার বিষয় এবং ধর্ষণের বিষয়টি। বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলার বিষয়টিও বহিঃ বিশ্বে তারা ছড়িয়ে দেন। মিশনারি সংস্থার এমন উদ্যোগের জন্য বহির বিশ্বে যখন খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে তখন মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাতে থাকেন।

জাতিসংঘের প্রতিনিধির মাধ্যমে

অপারেশন সার্চলাইটে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত অপারেশন টি তে জাতিসংঘ সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলেও অর্থাৎ সে অপারেশন টি বন্ধ না করলেও বিভিন্ন ত্রাণ কর্মীদের সেখানে অবস্থান নিতে বলেন। এ সমস্ত ত্রাণকর্মী সরাসরি ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তারা খুব নিকট থেকে সেই নৃশংসতার ঘটনা নিজ চোখে দেখেছিলেন। ডাবলু এইচ ও এর মত সংগঠনগুলোর কর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা সেখানে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতেন এবং সেগুলো জেনেভা বা নিউইয়র্ক শহরে পাঠাতেন।
সেখান থেকে এই খবরগুলো সারা বিশ্বের ছড়িয়ে পড়ে। তারা যে বিষয়গুলি উল্লেখ করেছিলেন তার মধ্যে হল বাঙালি অত্যাচারের কারণে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে সেই বিষয়টি। এছাড়া তারা উল্লেখ করেন নিশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এর পাশাপাশি তারা উল্লেখ করেন ত্রান সহায়তার সংকটের বিষয়টি। নারী ও শিশুর প্রতি যে সহিংসতা চলছিল সেই বিষয়টিও তারা উল্লেখ করেন। তাদের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের জনমত গঠন হয়। বিভিন্ন সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং জনমত গঠন হয়। জাতিসংঘের প্রতিনিধি গণ বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে

পাকিস্তানি বাহিনী চেয়েছিল তাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনভাবেই যাতে আন্তর্জাতিক মহল পর্যন্ত না পৌঁছায়। কিন্তু এরপরও আন্তর্জাতিক মহলের কিছু গোয়েন্দা সংস্থা পূর্ব পাকিস্তানের চলমান বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেও ভারতের র। তারা পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং সময় সময়ে তথ্যগুলো প্রদান করছিলেন। ভারতের র ব্যতীত মার্কিন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা গুলো কাজ করছিল। তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছিল এবং তথ্য প্রদান করছিল।

গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরা নিজ সংগঠনের কাছে তথ্য প্রদান করার পাশাপাশি কিছু কর্মী বিশেষ সাহসিকতা দেখিয়ে গণমাধ্যমের কাছেও বিষয়গুলো পাঠিয়ে দেন এবং বহিঃ বিশ্বে প্রকাশ করে দেন।যার ফলস্বরূপ পাকিস্তানের চালানো বড় বড় ও নিশংস হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এবং এ নিয়ে বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তৈরি হয়। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের উপর ভিত্তি করেই জেনোসাইড ইন ইস্ট পাকিস্তান শব্দগুলো উঠে আসে। কাজে অপারেশন সার্চলাইট চলার সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে।

রক্তাক্ত চিত্রের প্রদর্শনীর মাধ্যমে

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার সময় যেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল সেগুলো অনেক মানুষই প্রত্যক্ষ করেছিল এর পাশাপাশি চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছিল। একটি চিত্রই যথেষ্ট হয়ে যায় পুরো ঘটনার বর্ণনার জন্য। যেমন ১১৭৬ সালে যারা দুর্ভিক্ষের বিষয়গুলোর সম্পর্কে জয়নুল আবেদীন যে চিত্র প্রকাশ করেছিলেন তাতেই দুর্ভিক্ষের পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করা সম্ভব হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার বিষয়টিও একই।
অপারেশন-সার্চলাইটের-নৃশংস-হত্যাকান্ডের-খবর-বিশ্বে-কিভাবে-ছড়িয়েছিল
যারা বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করেছিলেন তারা এর ওপর রক্তাক্ত চিত্র প্রদর্শনী করেছিলেন। এই চিত্রগুলোর ভাবমূর্তি ছিল সেই রাতের চালানো নিশংস হত্যাকাণ্ডের উপর নির্ভর করে। বিশ্বের মানুষ জন চিত্র গুলোর মাধ্যমে বেশ প্রভাবিত হয়েছিল এবং আন্তর্জাতিক মহলে বাঙালির পক্ষে জনমত গড়ে উঠেছিল এবং পাকিস্তানের বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ গড়ে উঠেছিল। এই চিত্রগুলো যখন প্রদর্শন করা হয়েছিল তখন বহির্বিশ্ব পুরো পাকিস্তানি সেই রাতে চলা ঘটনা সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত হয়েছিল। রক্তাক্ত চিত্রের প্রদর্শনী সেই ঘটনা প্রকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

মন্তব্যঃ অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়েছিল

অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়েছিল সে সম্পর্কে উপরোক্ত বিষয়গুলোতে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চে চলমান অপারেশন সার্চলাইট বাঙালি জীবনে এক কালো অধ্যায় ছিল যেটি বাঙালির মনে দাগ কেটে গিয়েছিল। এই দিনে অসংখ্য মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহত হয়। ধর্ষিত হয় অনেক মা বোন এবং নির্যাতিত হয় শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সী সকলে। বাদ যায়নি দেশের সম্মানিত বুদ্ধিজীবী গণ। পঁচিশে মার্চ কাল রাতের এই ঘটনাটি ছিল ভয়াবহ।

এই খবরগুলো পুরো বিশ্বের ছড়িয়ে যাওয়া তৎকালীন সময়ে খুবই জরুরী হয়ে পড়ে। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী চেয়েছিল এই ঘটনা যাতে বহিঃ বিশ্বে ছড়িয়ে না যায় সেজন্য দেশ থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের বের করে দেওয়া হয়। এরপরও কিছু সংস্থা এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সাহসীকতার কারণে খবরগুলো বহির্বিশ্বের দ্রুত ছড়িয়ে যায়। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। বলা যেতে পারে অপারেশন সার্চ লাইট এর মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম পরাজয় শুরু হয়। ইতিহাস সম্পর্কে নতুন বিষয় জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।250510

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

protipsbangla নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url